কক্সবাজার সদর উপজেলা আয়তন: ২২৮.২৩ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২১°২৪´ থেকে ২১°৩৬´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°৫৯´ থেকে ৯২°০৮´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে চকোরিয়া উপজেলা, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর ও রামু উপজেলা, পূর্বে রামু উপজেলা, পশ্চিমে মহেশখালী উপজেলা, মহেশখালী চ্যানেল ও বঙ্গোপসাগর।
জনসংখ্যা ৩৪৮০৭৫; পুরুষ ১৮৬১৫১, মহিলা ১৬১৯২৪। মুসলিম ৩১৪৫৬৩, হিন্দু ২৭০৩৯, বৌদ্ধ ১৯৯, খ্রিস্টান ৬২৪৪ এবং অন্যান্য ৩০।

জলাশয় প্রধান নদী: বাকখালী।
প্রশাসন ১৮৫৪ সালে কক্সবাজার থানা এবং ১৯৫৯ সালে টাউনকমিটি গঠিত হয়। ১৯৭২ সালে টাউনকমিটি বিলুপ্ত করে পৌরসভায় রূপান্তরিত হয়। ১৯৮৩ সালে থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয়। ১৯৮৯ সালে পৌরসভাকে সি গ্রেড থেকে বি গ্রেডে উন্নীত করা হয়।
তথ্যঃ

কক্সবাজার সদর উপজেলা আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১,
প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ কক্সবাজার বৌদ্ধ প্যাগোডা, অগ্বমেধা বৌদ্ধ কেয়াং, ঝিলংজা ইউনিয়নে দ্বাদশ শতাব্দিতে নির্মিত এক গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ।
মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকবাহিনী শহরের পুরাতন রেস্ট হাউসের পেছনে প্রবীণ আইনজীবী জ্ঞানেন্দ্র লাল চৌধুরীসহ কিছুসংখ্যক লোককে হত্যা করে এবং বদর মোকাম এলাকায় দুজন মুক্তিযোদ্ধাকে গুলি করে হত্যা করে।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন স্মৃতিস্তম্ভ ১ (শহরের পুরাতন রেস্ট হাউজের পেছনে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে নির্মিত)।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ২৯৬, মন্দির ২১, প্যাগোডা ১৭, গির্জা ৫, মাযার ৫। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: কক্সবাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, বদর মোকাম জামে মসজিদ, বড় বাজার জামে মসজিদ, ঈদগাঁ বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, কক্সবাজার কালীবাড়ি মন্দির, কক্সবাজার সরস্বতী বাড়ি মন্দির, শাহ আলাউদ্দিনের মাযার, মওলানা নুরুল হকের (ডুলা ফকির) মাযার, পেটান শাহের মাযার, কালু শাহের মাযার, মোজাহের শাহের মাযার।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৩৯.৭%; পুরুষ ৪৪.০%, মহিলা ৩৪.৭%। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: কক্সবাজার সরকারি কলেজ (১৯৬২), কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৭৪), ঈদগাঁ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৮), মাইজপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯৩০), কক্সবাজার হাসেমিয়া আলিয়া মাদ্রাসা (১৯৫২)।
পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী দৈনিক: সৈকত, কক্সবাজার, আজকের দেশ বিদেশ, দৈনন্দিন, মায়ের দেশ, সাপ্তাহিক: স্বদেশবাণী; অবলুপ্ত পত্রিকা: দৈনিক হিমছড়ি ও বাঁকখালী, সাপ্তাহিক: কক্সবাজার, কক্সবাজার বার্তা, সাগরবাণী ও সাগরকণ্ঠ।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ক্লাব ২১, লাইব্রেরি ২, সাহিত্য সংগঠন ১, মহিলা সংগঠন ২, নাট্যদল ১, সিনেমা হল ৩, খেলার মাঠ ১০।
বিশেষ আকর্ষণ পৃথিবীর দীর্ঘতম কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। সমুদ্র সৈকতে রয়েছে ম্যানগ্রোভ ফরেস্টের অপূর্ব সবুজ বেষ্টনী। উপজেলার অধিকাংশ এলাকা পাহাড় ও টিলা দ্বারা বেষ্টিত। পাহাড়ে আছে শাল, সেগুন, মেহগনি, গর্জন, রাবারসহ নানা প্রকৃতির উদ্ভিদ ও দুষ্প্রাপ্য অর্কিড। রাডারস্টেশন (হিলটপ সার্কিট হাউজ সংলগ্ন)। তাছাড়া সরকারি উদ্যোগে নির্মিত থ্রিস্টার হোটেলসহ ছয়টি বড় হোটেল, বেসরকারি উদ্যোগে নির্মিত ৩০টি মাঝারী এবং ৫০টি নিম্ন মাঝারী হোটেল রয়েছে। ঝিনুক মার্কেট এবং বার্মা, থাইল্যান্ড, চীন প্রভৃতি দেশ থেকে সীমান্তপথে আগত বিলাস সামগ্রীর বাজার।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৩৪.০১%, অকৃষি শ্রমিক ৫.৯৭%, ব্যবসা ২৩.৮২%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ২.৯৪%, চাকরি ১০.০৭%, নির্মাণ ২.১১%, ধর্মীয় সেবা ০.৩০%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ৪.৯৫% এবং অন্যান্য ১৫.৮৩%।
কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৩১.৬৮%, ভূমিহীন ৬৮.৩২%। শহরে ৩৬.২৭% এবং গ্রামে ২৯.৮৮% পরিবারের কৃষিভূমি রয়েছে।
প্রধান কৃষি ফসল ধান, আলু, পান, সুপারি, শাকসবজি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি মিষ্টি আলু, আখ, কাউন, অড়হর।
প্রধান ফল-ফলাদিব আম, কাঁঠাল, পেঁপে, কলা, আনারস।
মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার গবাদিপশু ২৪, হাঁস-মুরগি ১৯৭, মৎস্য ২৫০, চিংড়ি ২২৬, চিংড়ি হ্যাচারি ২০।
যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৬০ কিমি, আধাপাকা রাস্তা ১৫ কিমি, কাঁচারাস্তা ১৭০ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পালকি, সাম্পান।
শিল্প ও কলকারখানা পোশাকশিল্প, মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প, মৎস্য খাদ্যমিল, লবণমিল, বরফকল, ফ্লাওয়ারমিল, ধানকল, স’মিল, ছাপাখানা, ওয়েল্ডিং কারখানা।
কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, তাঁতশিল্প, মৃৎশিল্প, ঝিনুকশিল্প, কাঠের কাজ, বাঁশের কাজ।
হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৮, মেলা ৩। বাংলা বাজার, টাইম বাজার, চৌফলদন্ডী বাজার, ঈদগা বাজার এবং বলীখেলা মেলা ও বৈশাখী মেলা উল্লেখযোগ্য।
প্রধান রপ্তানিদ্রব্য পান, সুপারি, কাঁঠাল, কলা, পেঁপে, আনারস, কাঠ, হিমায়িত চিংড়ি, শুঁটকি মাছ।
বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৪০.০৫% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
প্রাকৃতিক সম্পদ জিরকন, ইলমেনাইট, ব্রুটাইল, কয়নাইট, ম্যাগনাটাইট, মোনাজাইট।
পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯০.১২%, পুকুর ০.৬৩%, ট্যাপ ৪.১৪% এবং অন্যান্য ৫.১১%।
স্যানিটেশন ব্যবস্থা উপজেলার ৪১.৯৫% (গ্রামে ৩৫.১০% এবং শহরে ৫৯.৪৬%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৪৩.১২% (গ্রামে ৪৭.২০% এবং শহরে ৩২.৬৭%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১৪.৯৩% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র সরকারি হাসপাতাল ১, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, মাতৃমঙ্গল কেন্দ্র ১, টিবি ক্লিনিক ১, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ১।
